ধারাবাহিক বড় গল্পঃ সেই সাতদিন।
প্রথম দিন
সেন্টুল এলআরটি স্টেশন থেকে নেমেই তুমুল বৃষ্টির দেখা পেলো আনুশকা। ডানদিকে টিটিওয়াংসা আর বামদিকে সেন্টুল তিমুর। অরণ্য এখনেই, এই স্টেশনেই দেখা করতে বলেছিল আনুশকাকে। আনুশকা খুব ভালো করে চারদিক তাকিয়ে দেখল, অরণ্যকে কোথাও পেলনা। অরণ্য কোনদিন আনুশকাকে অপেক্ষা করায়নি। আজ দশ বছর পরে আবার দেখা হবে অরণ্য আর আনুশকার। এতদিনে দুজনেই অনেকটুকু পথ পেরিয়ে এসেছে। এর মাঝে অনেক কিছুই বদলে গেছে দুজনের জীবনেই। অরণ্য কুয়ালালামপুর থাকে গত পাঁচ বছর। আনুশকাকে জীবন থেকে হারানোর পর অরণ্যর আর কোথাও মন বসেনি। কুয়ালালামপুর এসে আনুশকাকে ভুলে থাকতে চেয়েছিল অরণ্য। একটা ছোট দোকান নিয়েছে বুকিত বিনতাং এর লোইয়াত প্লাজায়। আর আনুশকা কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিল অরণ্যকে তাঁর জীবন থেকে মুছে দিয়ে। টরেন্টোতে এখন একটা লাইব্রেরীতে কাজ করে সে। গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকায় ফেরার পথে কুয়ালালামপুরে সাত দিনের জন্য একটা বিরতি নিয়েছিল আনুশকা। গেন্টিং হাইল্যান্ডসের কথা অনেক শুনেছে। প্ল্যান ছিল গেন্টিং আর লাঙ্কাউইতে সাত দিনের ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরবে। বুকিত বিনতাং এর একটা হোটেলে উঠেছে আনুশকা। হোটেল থেকে কাছেই লোইয়াত প্লাজা। বিকেলে শপিং এর জন্য বের হয়ে আনুশকা গিয়েছিল লোইয়াত প্লাজায়। চার তলায় একটা দোকানের সামনে আসতেই পাথরের মত থমকে দাঁড়াল আনুশকা। এ কি সেই মানুষটিই? মাত্র দশটা বছর কি একটা মানুষকে এতোটা দুর্বল করে দিতে পারে? চল্লিশ ছুঁইছুঁই অরণ্যকে ঘন কাঁচাপাকা দাঁড়ি আর সত্তর ভাগ চুল ছাড়া মনে হচ্ছিল যেন পঞ্চাশ বছরের কেউ। অন্যদিকে আনুশকার গত দশ বছরে একটুও পরিবর্তন হয়নি, বরং যেন আরও বেশী আকর্ষণীয় হয়েছে। থমকে যাওয়া আনুশকাকে দেখে অরণ্যও ভাষা হারিয়ে তাকিয়ে রইলো অপলক। অরণ্যই নীরবতা ভাঙল।
– আনুশকা? কেমন আছ? বেড়াতে এসেছ এখানে? বাচ্চারা কোথায়? তোমার হাজব্যান্ড?
– অরণ্য! তুমি এতো বুড়িয়ে গেছ কেন?
– তরুণ থাকার কোন কারণতো আমার নেই।
– ঠিক বুঝলাম না। তুমি বিয়ে করনি?
মুচকি হেসে অরণ্য কথাটা এড়িয়ে গেল। বলল, “থাক ওসব কথা। তোমার খবর বল। তুমিতো টরেন্টোতে থাকো। কুয়ালালামপুর বেড়াতে এসেছ? নাকি কোন কাজে?” আনুশকা এক পলক অরণ্যর দিকে চেয়ে আবার চোখটা অন্যদিকে সরিয়ে নিল। প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে পাল্টা জানতে চাইল “অরণ্য, তুমি কি এখনো আমাকে ভালবাস?” অরণ্য কিছু না বলে আনুশকার চোখের দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইল।
আগের পর্ব গুলোর লিংকঃ
১। দহন (সেই সাতদিন প্রারম্ভিক)
————-
কপিরাইটঃ আশিক মজুমদার © ২০১৮। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে probhat.com এ। প্রভাতে প্রকাশিত যেকোন লেখা প্রভাতের কিংবা লেখকের পূর্ব অনুমতি ব্যাতিত অন্যত্র প্রকাশ করা কিংবা অন্য যেকোন মাধ্যমে কপি পেস্ট করা বাংলাদেশ কপিরাইট আইন দারা নিষিদ্ধ।
প্রভাতে প্রকাশিত সমস্ত লেখা বাংলাদেশ কপিরাইট আইন দ্বারা নিবন্ধিত। প্রভাত একটি বাংলা সাহিত্য বিষয়ক ওয়েব সাইট। এই ওয়েব সাইটে প্রকাশিত সমস্ত লেখা লেখকের ব্যাক্তিগত সম্পদ। লিখিত অনুমতি ব্যতিরকে এই সাইটের কোন লেখা কপি করা, পরিবর্তন করা, পরিমার্জন করা, ছাপানো ইত্যাদি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দণ্ডনীয়। প্রভাতের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে লিখুন এই ঠিকানায় admin@probhat.com